ব্যায়ামকে আরও উপভোগ্য করার ১৬টি উপায়

অনেকেই বলে আমি ওয়ার্কআউট ঘৃণা করি, কিন্তু ফিট হতে চাই। কিভাবে সবসময় ব্যায়াম করতে অনুপ্রাণিত থাকবো? ব্যায়ামকে আরো উপভোগ্য ও আনন্দময় করতে কিছু টিপস দিন। ইত্যাদি…

এটি সত্যি যে ব্যায়াম করা সহজ নয়, তবে আমরা এটিকে মজাদার এবং ফলপ্রসূ করতে পারি। ওয়ার্কআউটগুলি যদি আগের মতো মজাদার মনে না হয় তবে নতুন আইডিয়া বের করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

ব্যায়ামকে মজাদার করার অনেক উপায় আছে। ব্যায়াম রুটিনকে আরও আনন্দদায়ক করার জন্য আজকে কিছু সহজ উপায় সম্পর্কে আলোচনা করবো।

১. বিনোদন উপভোগ করুন

enjoy entertainment
বিনোদন উপভোগ করুন
  • ব্যায়ামকে উপভোগ করার জন্য পডকাস্ট বা অডিওবুক শুনে মনকে স্বাচ্ছন্দ্যে রাখতে পারেন। 
  • কার্ডিও করার সময় ট্রেডমিল বা হোম ব্যায়াম বাইকে ফোন রেখে ওয়ার্কআউটকে মজাদার করতে পছন্দের টিভি শো দেখতে পারেন।

২. আপনার ভিতরের শিশুত্বকে জাগিয়ে তুলুন

Awaken your inner child
ভিতরের শিশুত্বকে জাগিয়ে তুলুন

বাচ্চারা চারপাশে দৌড়াতে এবং বাইরে খেলতে পছন্দ করে। আমরা বয়স্ক হওয়ার কারণে কেন এটি বন্ধ করবো? শিশুরা ব্যায়াম উপভোগ করে কারণ তারা এটিকে ব্যায়াম হিসাবে বিবেচনা করে না; তারা শুধু তাই করছে যা তারা ভালোবাসে! 

আমাদের ওয়ার্কআউটেও একই ধারণা প্রয়োগ করতে পারি। বাইক চালানো, আইস স্কেটিং, বাচ্চাদের সাথে ট্যাগ খেলা, পছন্দের গানে নাচ … হ্যাঁ, এই মজার ক্রিয়াকলাপগুলি ব্যায়াম হিসাবে গণ্য!

৩. লক্ষ্য স্থির করুন

Set Fitness Goals
লক্ষ্য স্থির করুন

ব্যায়াম মজাদার এবং চমত্কার করার আরেকটি দারুন উপায় হচ্ছে লক্ষ্য নির্ধারণ করে তা পূরণের চেষ্টা করা। অনেকেই ওয়ার্কআউট গোল স্থাপন করার পরে জিমে অগ্রগতি লক্ষ্য করেছে।

৪. চাপকে দূরে সরান

Remove Stress
চাপকে দূরে সরান

আপাতদৃষ্টিতে অবাস্তব লক্ষ্য নির্ধারণ করা থেকে বিরত থাকুন। ছোট লক্ষ্য স্থির করলে অতিরিক্ত চাপ থেকে দূরে থাকা যায়। 

বিশেষ করে আপনি যদি সবেমাত্র ব্যায়াম যাত্রা শুরু করেন, লক্ষ্যগুলি ছোট রাখুন, ব্যায়ামের জুতা পরার কথা বিবেচনা করুন, এবং ২০টি জাম্পিং জ্যাক করুন বা ১০ মিনিটের জন্য হাঁটাহাঁটি করুন। 

ছোট ছোট অর্জনগুলো বড় অর্জনের দিকে নিয়ে যায় এবং নিজের সম্পর্কে ভাল অনুভূতি তৈরি করে নিজের উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে এবং ব্যর্থতাকে প্রতিহত করতে সাহায্য করে।

৫. গেম খেলুন

play fitness games
গেম খেলুন

ব্যায়ামকে মজাদার ও উত্তেজনাপূর্ণ করার জন্য গেম খেলা একটি দুর্দান্ত উপায়।সঙ্গীত, টিভি শো, পডকাস্ট বা অডিওবুকের মাধ্যমে কিছু বিনোদন খোঁজার পাশাপাশি, ওয়ার্কআউটের সময় একটি গেমিং অ্যাপ ডাউনলোড করে গেম খেলতে পারেন।

উদাহরণস্বরূপ, কার্ডিও ওয়ার্কআউটের সময়, আপনি একটি মজাদার ওয়ার্কআউট রুটিন তৈরি করতে পারেন যেখানে আপনি একটি জম্বি অ্যাপোক্যালিপসের মাঝখানে নিজেকে বাঁচানোর জন্য দৌড়াচ্ছেন। 

আবার এমন গেমও রয়েছে যা আপনি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অ্যাপ ছাড়াই খেলতে পারেন। বর্তমান ভার্চুয়াল রিয়েলিটি টেকনোলজির মাধ্যমে Beat Saber, Supernatural, Thrill of the Fight, Holopoint, OhShape, ইত্যাদির মতো অনেক আকর্ষণীয় ফিটনেস গেম খেলা যায়।

৬. ওয়ার্কআউট পার্টনার খুঁজুন

workout partner
ওয়ার্কআউট পার্টনার খুঁজুন

ব্যায়ামের সময় আপনি কথা বলতে পারেন এমন কাউকে পাওয়াটা ভালো। একটি ওয়ার্কআউট অনেক বেশি উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারে যদি সাথে এমন কেউ থাকে যিনি একই ব্যায়াম করছেন এবং আপনার মতোই বেশি কাজ করছেন। তার দেখা দেখি আপনিও ব্যায়ামে মনোযোগী হতে পারবেন।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণা অনুসারে, যখন দলের সদস্যরা একসঙ্গে ব্যায়াম করেন, তখন তাদের শরীর একাকী কাজ করার তুলনায় অনেক বেশি ভালো লাগার এন্ডোরফিন নিঃসরণ করে।

৭. অনলাইন কমিউনিটিতে যোগদান করুন

Join online fitness community
অনলাইন কমিউনিটিতে যোগদান করুন

যদি ওয়ার্কআউট পার্টনার খুঁজে পেতে সম্যসা হয় তবে সেই বন্ধুত্ব অনলাইনে খুঁজুন। সোশ্যাল মিডিয়া বা ফিটনেস অ্যাপের মাধ্যমে আপনি অনেক বন্ধু বানাতে পারেন। 

আপনার লক্ষ্যগুলি ভাগ করুন, অগ্রগতি এবং বাধাগুলি সম্পর্কে কথা বলুন। এটি কেবল অনুশীলনকে আরও উপভোগ্য করে তুলবে না, পাশাপাশি  আপনাকে দায়বদ্ধও রাখবে৷

৮. ক্লাসে যোগ দিন

Start or join a sports or fitness club at work
ফিটনেস ক্লাব শুরু করুন বা যোগ দিন

কয়দিন জিম থেকে বিরতি নিয়ে নতুন কিছু চেষ্টা করুন। স্থানীয় এলাকার যোগব্যায়াম, পাইলেটস, অ্যাকোয়া অ্যারোবিকস, নাচ, স্পিনিং, কিকবক্সিং বা জুম্বা ক্লাসে যোগ দিন। সেখানে মজা করার পাশাপাশি নতুন বন্ধুও তৈরি করতে পারবেন।

৯. রুটিনে নতুন নতুন ব্যায়াম সংযুক্ত করুন

ওয়ার্কআউটগুলিকে উত্তেজনাপূর্ণ ও সৃজনশীল করার জন্য প্রতি সপ্তাহে নতুন ব্যায়াম যোগ করতে পারেন যেমনঃ যোগব্যায়াম, HIIT, ক্যালিসথেনিক্স, দৌড়ানো এবং আরও অনেক কিছু।

তবে এক্ষেত্রে আপনার প্ৰশিক্ষকের সাথে আলচনা করে ব্যায়াম বাছাই করলে ভালো ফলাফল পাবেন ইনশাআল্লাহ। অবশ্যই ব্যায়ামের আগে ওয়ার্ম আপ করুন।

১০. ফিটনেস ট্র্যাকার ডিভাইস বা অ্যাপসের সাহায্যে অগ্রগতি ট্র্যাক করুন

use fitness tracker
ফিটনেস ট্র্যাকার ব্যবহার করুন

স্বাস্থ্য এবং ফিটনেস লক্ষ্যগুলির জন্য নিজেকে দায়বদ্ধ রাখা আমাকে প্রক্রিয়াটি উপভোগ করতে সহায়তা করে। আমি একটি লক্ষ্যের দিকে সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি দেখতে অনেক আনন্দ বোধ করি।

বর্তমানে ব্যায়ামের অগ্রগতি ট্র্যাক করার জন্য অনেক ফিটনেস ট্র্যাকার ওয়াচ, অ্যাপস বা অন্যন্য ডিভাইস রয়েছে যেগুলো আপনাকে নির্দিষ্ট লক্ষে পৌঁছাতে সাহায্য করে।

এই ফিটনেস ট্র্যাকার ডিভাইস গুলো আপনার চোখের সামনে ফিটনেস সম্পর্কিত ডাটাগুলো তুলে দরবে এবং সে অনুযায়ী আপনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবেন।

১১. ওয়ার্কআউটের জন্য সঠিক সময় বেছে নিন

ব্যায়াম করার উপযুক্ত সময়
ব্যায়াম করার উপযুক্ত সময়

কোন সময় ব্যায়াম করবেন তার উপর ভিত্তি করেও ব্যায়ামের প্রতি আগ্রহ ও অনাগ্রহের সৃষ্টি হতে পারে। কখনোই এমন সময় নির্বাচন করা উচিত নয় যখন আপনার ব্যায়াম করতে ভালো না লাগে এতে করে ব্যায়ামের প্রতি অনাগ্রহের সৃষ্টি হতে পারে।

আপনি খুব সকালে বা কাজের ঠিক পরে বিকেলে নিয়ে যেতে পারেন। সকালে ওয়ার্কআউট করলে সেগুলি আরও উপভোগ করবেন কারণ এটি আপনার দিন শুরু করার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় শক্তি জোগাতে সাহায্য করবে। ফলে সারাদিন সুখী এবং প্রাণবন্ত অনুভব করবেন।

অন্যদিকে, কাজ শেষে বিকেলের দিকে ওয়ার্কআউট করা আরও ভাল হতে পারে কারণ এটি কিছুটা চাপ উপশম করতে পারে এবং দীর্ঘ দিন চেয়ারে বসে থাকার পরে আপনাকে ঘোরাফেরা করতে দেয়। দিনের কোন সময়টি ব্যায়ামের জন্য ভালো সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বের করুন এবং কাজ শুরু করুন।

১২. স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করুন

balanced diet for exercise
ব্যায়ামের জন্য সুষম খাদ্য

জিমে নতুন লক্ষ্য নির্ধারণের পাশাপাশি খাদ্যাবাস পরিবর্তন করার বিষয়েও আপনার চিন্তা করা উচিত।অনেক সময় ভুল ডায়েটের কারণে আপনি অনুপ্রেরণা এবং শক্তির অভাব অনুভব করেন।

জটিল কার্বোহাইড্রেট, চিনি এবং অন্যান্য উপাদানের উচ্চমাত্রার খাবার খাওয়া আপনার ওয়ার্কআউটগুলিকে ক্লান্তিকর করে তুলতে পারে।

এগুলোর পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট, চর্বি এবং প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে আপনি ওয়ার্কআউটের আগে, চলাকালীন এবং পরে অনেক ভালো বোধ করবেন।

১৩. ভাল ওয়ার্কআউট জামাকাপড় এবং জুতা পরুন

Exercise Clothing
ব্যায়ামের পোশাক

বিশ্বাস করুন বা না করুন, অনুশীলনের সময় আপনি যা পরেন তাও ওয়ার্কআউটকে মজাদার করতে পারে। ব্যায়ামের জন্য ডিজাইন করা পোশাক পরলে আরও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হয় কারণ সেগুলি প্রায়শই ঘাম-প্রতিরোধী এবং চলাফেরার জন্য তৈরি কাপড় দিয়ে তৈরি। 

ওয়ার্কআউট জামাকাপড়গুলি স্টাইলিশ হয় ফলে আপনাকে আরো সুন্দর দেখায়। এতেকরে আপনি নিজের সম্পর্কে ভাল বোধ করেন, যা আপনাকে আরো আত্মবিশ্বাসী করে তুলে। এই সহজ পরিবর্তনগুলো ও ব্যায়ামকে ব্যাপকভাবে উন্নত করতে পারে।

১৪. বাড়িতে ব্যায়াম করুন

অনেক সময় বাড়িতে ওয়ার্কআউট করলে সেগুলো আরও উপভোগ্য মনে হতে পারে। অন্য জিমের সদস্যদের সাথে ব্যায়ামের সরঞ্জাম নিয়ে লড়াই করার পরিবর্তে বা প্রথমে সেখানে যাওয়ার জন্য ট্র্যাফিকের মধ্যে বসে থাকার পরিবর্তে, একটি হোম জিম তৈরি করে ব্যায়ামকে মজাদার এবং সুবিধাজনক করতে পারেন। 

একটি হোম জিমের মাধ্যমে অতিরিক্ত চাপ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। আশাকরি পুরো পোস্টটি পড়ে আপনি জেনে যাবেন কিভাবে ঘরে বসে ওয়ার্কআউটকে মজাদার করতে হয়।

১৫. নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করবেন না

অবশ্যই, স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার মতো একটি জিনিস রয়েছে। কিন্তু অনেক নারী পুরুষ নিজেকে অন্যদের থেকে খারাপ হিসেবে তুলনা করে। এটি কর্মক্ষেত্রে, বাড়িতে এবং এমনকি জিমেও দেখা যায়।

“সে আমার চেয়ে অনেক বেশি স্লিম! আমি কখনই এত দ্রুত পারব না!” – এই নীতিবাচক কথাগুলো চিন্তা করে আমরা নিজেদের পিছিয়ে পেলছি। এটি না করে আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে। সে তার চেষ্টা করেছে তাই সে সফল হয়েছে, আপনিও চেষ্টা করে যান। 

১৬. নিজেকে পুরস্কৃত করুন

reward yourself
নিজেকে পুরস্কৃত করুন

পছন্দের কাজগুলো করার মাধ্যমে নিজেকে পুরস্কৃত করুন। স্নান করুন, মুখের মাস্ক করুন, এক কাপ চা এবং আপনার প্রিয় টিভি অনুষ্ঠানের একটি পর্ব উপভোগ করুন। 

কঠোর অনুশীলনের পর একটি পোস্ট-ওয়ার্কআউট ট্রিট আপনাকে অনুপ্রাণিত করতে সহায়তা করবে। এটি আপনাকে ইতিবাচক অনুভূতির সাথে ব্যায়ামকে যুক্ত করতে এবং একটি রুটিন তৈরি করতে সাহায্য করবে যা আপনি উপভোগ করবেন।

প্রতিটি ওয়ার্কআউটের জন্য একটি জারে ৫০-১০০ টাকা করে রাখতে পারেন। প্রতি মাসে এই অর্থ খাবারের জন্য বা একটি নতুন পোশাকের জন্য ব্যবহার করতে পারেন।

উপসংহার

ব্যায়ামকে আরও আনন্দদায়ক করার উপায়গুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • একটি মজাদার কার্যকলাপ বা খেলা যা আপনি উপভোগ করেন তা খুঁজে বের করা ,
  • বন্ধু বা একটি দলের সাথে ব্যায়াম করা, 
  • ওয়ার্কআউট করার সময় সঙ্গীত বা পডকাস্ট শোনা, 
  • অর্জনযোগ্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা, 
  • আপনার অগ্রগতি ট্র্যাক করা এবং 
  • আপনার রুটিন মিশ্রিত করার উপায় খুঁজে বের করা।

এই কৌশলগুলিকে ব্যায়ামের রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করে শারীরিক কার্যকলাপকে আরো উপভোগ্য করতে পারেন এবং দীর্ঘমেয়াদে এটির সাথে লেগে থাকতে পারেন। কোনো নতুন ব্যায়াম প্রোগ্রাম শুরু করার আগে সর্বদা একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করতে ভুলবেন না।

শেয়ার করুন:

You May Also Like

Leave a Comment