ব্যায়াম করার উপযুক্ত সময় কোনটি? ২০২৩

শরীর ফিট রাখতে ব্যায়াম করার উপযুক্ত সময় সম্পর্কে জানা আবশ্যক। সকাল না সন্ধে, কখন ব্যায়াম করলে ওজন কমবে সবচেয়ে বেশি? এ প্রশ্নটি প্রায় সবার। এক্ষেত্রে ব্যক্তি ভেদে মতামত ভিন্ন। কেউ বলে সকাল তো কেউ বিকাল আবার কেউ বলে রাত। 

আপনি যখনই ব্যায়াম করেন না কেন, নিয়মিত এক্সারসাইজের উপকারিতা অনেক, যেমন হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি করা, শক্তিশালী হওয়া, ধৈর্যের উন্নতি করা, ওজন কমানো ইত্যাদি। 

গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরচর্চার জন্য নির্ধারিত সময়টি বিভিন্ন উপায়ে ওয়ার্কআউটকে প্রভাবিত করে। আজকে ব্যায়াম করার সঠিক সময় ও আপনার জন্য কোনটি ভালো হবে তা আলোচনা করবো যাতে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে কখন ব্যায়াম করবেন, কখন করবেন না। 

Table of Contents

যখনি পারেন তখনি ব্যায়াম করার সর্বোত্তম সময়

যখনি আপনি ফ্রি থাকেন সেটাই ব্যায়াম করার জন্য সর্বোত্তম সময়। দিনের বেশিরভাগ সময় আমরা নানান কাজে বাইরে ব্যাস্ত থাকি। তাই সকাল ,বিকেল, বা রাত যখনি সময় পান সেটাই ব্যায়াম করার উপযুক্ত সময়।

যদি আপনার দিনের কাজ শুরু করার আগে একমাত্র সময় থাকে এবং দিনের অন্য সময়গুলোতে ব্যাস্ত থাকেন তাহলে সকাল ব্যায়াম করার উপযুক্ত সময়। এক্ষেত্রে যদি বিকেলের জন্য পেলে রাখেন তবে এটি না করার সম্বাবনাই বেশি।

একইভাবে, আপনি যদি সারাদিন কাজ করে রাতে গুমানোর ঠিক আগে মাত্র ২০ মিনিট ব্যায়াম করার সময় পান তবে এটিই ব্যায়াম করার সেরা সময়।

এক্ষেত্রে একটি নোট যোগ করতে চাই, যদিও ব্যায়াম করার সর্বোত্তম সময় হল আপনি যখনই পারেন, কিন্তু প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট টাইমে ওয়ার্কআউট করাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। 

এখন আপনার থেকে যদি সকালে ব্যায়াম করতে ভালো লাগে কিন্তু তখন সময় না থাকে তাহলে কি করবেন? তাহলে রাতে যে ২০ মিনিট সময় পেয়েচেন তা কাজে লাগান। এক্ষেত্রে ২০ মিনিট আগে গুমিয়ে পড়ুন এবং সকালে ২০ মিনিট আগে জেগে ব্যায়াম শুরু করুন

তবে যাদের সময়ের চিন্তা নেই তাঁরা যেকোনো সময় ব্যায়াম করতে পারেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে ব্যায়াম শুরু করুন তাহলে সারাদিন শরীর ও মন সতেজ ও ফুরফুরে থাকবে। এছাড়া বিকেলও ব্যায়ামের উপযুক্ত সময়। আর যারা সারাদিন ব্যস্ত, তাঁরা রাতে ব্যায়াম করেন।

তবে যেহেতু ব্যায়ামে প্রচুর ঘাম ঝরে তাই নরম আবহাওয়াতেই করা ভালো। দুপুরবেলা বা বেশি গরমে ব্যায়াম করলে সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। তাই এ সময়ে ব্যায়াম না করাই ভালো।

যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তারা দীর্ঘমেয়াদে ভাল ফলাফল দেখতে পান। গবেষণা বলে যে আপনার শরীর নিয়মিত প্রশিক্ষণের সময়সূচীর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।

সকালের ওয়ার্কআউট এবং রাতের ওয়ার্কআউট উভয়েরই তাদের সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে যা কয়েক দশকের বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত – আসুন আলোচনা করা যাক।

সকালের ব্যায়ামের সুবিধা

একাধিক গবেষণা অনুসারে সকালের ওয়ার্কআউটের উপকারিতা বা সুবিধা অনেক।

একটি ফিটনেস রুটিন প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করতে পারে 

যারা সকালে ব্যায়াম করেন তারা প্রায়শই বেশি দৃঢ়বদ্ধ হন এবং সারাদিন সহজেই একটি সুন্দর রুটিন মেনে চলতে সক্ষম হন।

ঘুমের চক্রকে উন্নত করতে পারে

তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠা প্রথমে কঠিন হতে পারে, কয়েকদিন সকালে উঠলে পরে অটোমেটিক উঠে যেতে পারবেন। 

কিছু গবেষণা অনুসারে, সকালের ব্যায়াম সন্ধ্যার ব্যায়ামের চেয়ে গভীর ঘুমাতে সাহায্য করে। ঘুম পেশী বৃদ্ধিকে সহজতর করে, তাই ঘুমের চক্রের উন্নতি হলে আপনি আরও শক্তি লাভ করতে পারেন।

অতিরিক্ত চর্বি পোড়াতে পারে

সকালে খালি পেটে ব্যায়াম করলে বেশি চর্বি পোড়ানো সম্ভব। কারণ তখন শরীরের জমাটকৃত ফ্যাটগুলো জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার হবে যা আপনাকে সময়ের সাথে সাথে ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।

আরও বেশি কর্মক্ষম করে তুলতে পারে

গবেষণায় দেখা গেছে যে সকালে ব্যায়াম করা শক্তির মাত্রা, সতর্কতা, ফোকাস এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপর একটি উপকারী প্রভাব ফেলে, যা আপনাকে আরও বেশি কর্মক্ষম করে তুলে।

মেজাজকে ফুরফুরা রাখে 

সকালে ওয়ার্কআউটের পরে শরীর এন্ডোরফিন বা “সুখী রাসায়নিক” উৎপন্ন করে যা মেজাজকে ভালো রাখতে পারে। এতে করে সারাদিন হাসি খুশি ভাবে কাটানো সম্বব। 

সকালের ওয়ার্কআউটের অসুবিধা

যদিও সকালের ব্যায়ামের অভ্যাস স্বাস্থ্যকর জীবনধারার একটি শক্তিশালী অংশ, তবে সকালের ওয়ার্কআউটেরও কিছু সামান্য অসুবিধা রয়েছে।

কম জ্বালানীতে কাজ করতে হবে 

যদি আপনি আগের দিন রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে না খান তবে সকালে ব্যায়ামের সময় গুরুতর ক্ষুধার সাথে লড়াই করতে হবে। 

এজন্য শোবার আগে পর্যাপ্ত খাওয়ার চেষ্টা করুন। অথবা সকালে ওয়ার্কআউটের আগে কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খেতে পারেন, যেমন একটি কলা।

গভীর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে

সকালের একটি অ্যালার্ম গভীর ঘুমকে ভেঙে দিতে পারে ফলে ঘুম থেকে ওঠার পর কিছুক্ষণের জন্য বিরক্তিকর বোধ করতে পারেন। 

ওয়ার্ম আপ হতে বেশি সময় লাগে 

সকালে ঘুম থেকে উঠার পর শরীরের তাপমাত্রা কম থাকতে পারে ফলে বডি ওয়ার্ম আপ হতে সময় বেশি লাগে। ওয়ার্মআপ না করে ওয়ার্কআউটে ঝাঁপিয়ে পড়লে আঘাতের সম্ভাবনা থাকে। পাশাপাশি ব্যায়ামের পর কুল ডাউন করাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

বিকেল এবং সন্ধ্যায় ব্যায়ামের সুবিধা

অনেকে বলে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে ওয়ার্কআউটে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় কারণ তখন শরীররে শক্তি এবং নমনীয়তা থাকে। আবার অনেকেই ব্যায়াম করার জন্য বিকেল এবং সন্ধ্যাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।

শারীরিক কর্মক্ষমতা উন্নত হতে পারে

গবেষণা দেখায় যে বেশিরভাগ লোকেরা দিনের শেষে আরও ভাল কাজ করে। পেশী শক্তি, নমনীয়তা, পাওয়ার আউটপুট এবং সহনশীলতা সকালের তুলনায় সন্ধ্যায় বেশি থাকে। এছাড়াও, যারা সন্ধ্যায় ব্যায়াম করেন তারা ক্লান্ত হতে ২০% বেশি সময় নেয়।

শরীর উষ্ণ হতে বেশি সময় লাগে না

দিনের শেষে উষ্ণ তাপমাত্রায় অনেক লোক বিকেল এবং সন্ধ্যায় ওয়ার্কআউট করতে পছন্দ করে। তবে তখনো ওয়ার্মআপ করা জরুরি। 

প্রয়োজনীয় হরমোনের উপস্থিতি বেশি থাকে

পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে পেশী তৈরির জন্য টেস্টোস্টেরন গুরুত্বপূর্ণ, এবং আপনার শরীর সকালের ওয়ার্কআউটের চেয়ে বিকেলের ওয়ার্কআউটের সময় এটির বেশি উৎপাদন করতে পারে, যার ফলে আরও শক্তি এবং পেশী লাভ হয়।

দেরীতে ব্যায়াম মানসিক চাপ উপশম করতে পারে

ব্যায়াম সবসময়ই স্ট্রেস দূর করার একটি ভালো উপায়। তবে বিকেল ও সন্ধ্যায় ব্যায়ামের ফলে এন্ডোরফিন হরমোন নির্গত হয় যা রাতে প্রশান্তির সাথে ভালোভাবে গুমাতে সাহায্য করে। 

খারাপ অভ্যাসগুলি প্রতিস্থাপনে সাহায্য করতে পারে 

আপনার যদি সন্ধ্যায় বা রাতে  স্ন্যাকিং, মদ্যপান, ধূমপান বা খুব বেশি টিভি দেখার অভ্যাস থাকে তবে ব্যায়ামকে তাদের জায়গা নিতে দিন। একবার নতুন অভ্যাসের সাথে আত্মীয়তা হয়ে গেলে পরে পুরানো অভ্যাসগুলিকে আর মিস করবেন না। 

বিকেল এবং সন্ধ্যায় ওয়ার্কআউটের অসুবিধা

বিকাল এবং সন্ধ্যায় ওয়ার্কআউটের উপরোক্ত সুবিধাগুলি আপনাকে দিনের শেষ ভাগে ব্যায়াম করার জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রলুব্ধ করতে পারে, তবে কয়েকটি সম্ভাব্য নেতিবাচক দিকগুলিও বিবেচনা করা উচিত।

তীব্র ব্যায়াম ঘুমের সমস্যা করতে পারে

রাতে ব্যায়াম করা ঘুমের জন্য ক্ষতিকর এটা সত্য না। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে রাতে ব্যায়াম করলে ঘুমের উপর কোনো প্রভাব নাও থাকতে পারে এবং কেউ কেউ ভালো ঘুমাতে পারে। 

তবে কেউ ঘুমানোর সময় বা খুব কাছাকাছি সময়ে অতিরিক্ত বা তীব্র ব্যায়াম যেমন ক্রসফিট বা HIIT-করলে ঘুমের ডিসটার্ব হতে পারে। অন্যদিকে যোগব্যায়াম, স্ট্রেচিং এবং অন্যান্য মৃদু ব্যায়ামগুলি শোবার আগে করলে ঘুমের উন্নতি হয়।

ক্লান্তি কাজ করতে পারে

সারাদিন কাজ করে রাতে ক্লান্ত হয়ে পড়ার সম্বাবনা বেশি থাকে। তখন আর ব্যায়াম করতে মন চাইবে না। এক্ষেত্রে রুটিন পরিবর্তন করে সকালে ব্যায়াম করার চেষ্টা করুন।

এখানে ক্লিক করুন 👉 ব্যায়ামের সময় আমরা যে ২৩টি ভুল করি

ব্যায়াম নিয়ে আরো প্রশ্নোত্তর

ভালো ঘুমের জন্য ব্যায়াম করার সেরা সময় কোনটি ?

প্রফেশনালদের মতে ঘুমানোর ৪ ঘন্টা বা তার আগে ব্যায়াম করা ভাল। 

পেটের চর্বি কমানোর জন্য ব্যায়াম করার সেরা সময় কোনটি ?

সকালে খালি পেটে ব্যায়াম করা পেটের চর্বি পোড়ানোর সর্বোত্তম ও আদর্শ সময়। সকালে ব্যায়াম করা বিপাককে উন্নত করে যার ফলে সারা দিন ক্যালোরি পোড়াতে থাকবেন।

সকালে ব্যায়াম করার সেরা সময় কোনটি ?

সকাল ৬-৭টা।

ওজন বাড়ানোর জন্য ব্যায়াম করার সেরা সময় কোনটি ?

সন্ধ্যা ৫-৭টা। কারণ সে সময় শরীর বেশি সক্রিয় থাকে। এ সময়ের মধ্যে ওয়ার্কআউট করলে আপনি ব্যায়াম করার জন্য শক্তি বেশি পাবেন। 

ঘুমের আগে কি ব্যায়াম করা উচিত?

যোগব্যায়াম, স্ট্রেচিং এবং অন্যান্য মৃদু ব্যায়ামগুলি ঘুমের আগে করলে ঘুমের উন্নতি হয়। কিন্তু তীব্র ব্যায়াম যেমন ক্রসফিট বা HIIT-করলে ঘুমের ডিসটার্ব হতে পারে। 

খালি পেটে ব্যায়াম, ভালো নাকি খারাপ?

খালি পেটে ব্যায়াম করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বিশেষ করে যারা পেটের মেদ কমাতে চান। তবে বেশি ক্ষুদা লাগলে হালকা কিচু খেয়ে নিন নতুবা শরীর খারাপ লাগতে পারে। 

এখানে ক্লিক করুন 👉 খাওয়ার কতক্ষণ পর ব্যায়াম করা উচিত?

ব্যায়াম করার সঠিক বয়স কোনটি?

৪-৫ বছর বয়স থেকেই হালকা মৃদু ব্যায়াম যেমন হাঁটা, সাঁতার কাটা ও দৌড়-ঝাঁপ ইত্যাদি দিয়ে শুরু করা উচিত। তবে বয়স এবং শরীরের অবস্থা অনুযায়ী ব্যায়াম বেছে নেওয়া উত্তম। নিতান্তই অক্ষম বা শয্যাশয়ী ব্যক্তি ছাড়া প্রত্যেকেরই নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিৎ।

ব্যায়াম করার পর কি খাওয়া উচিত?

ব্যায়ামের পর স্বাভাবিকভাবেই শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়। ব্যায়ামের আধা ঘণ্টা পর হালকা খাবার যেমন ফল কিংবা ফলের রস খেতে পারেন। আর অবশ্যই কমপক্ষে দুই ঘণ্টা পর ভারী খাবার খাবেন।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন 👉 ব্যায়ামের পর কি খাওয়া উচিত

সপ্তাহে কতদিন এবং দিনে কত ঘন্টা ব্যায়াম করা উচিত?

সাধারণ হিসাবে ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ৫ দিন মোট ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত। তবে শরীরের গঠন ও রোগের ধরণ অনুযায়ী সময় কম বেশি হতে পারে।

যেমন ডায়াবেটিক রোগীদের সপ্তাহে ৫ দিন ১ ঘণ্টা করে হাঁটা উচিত। ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন ৪০-৪৫ মিনিট হাঁটা উচিত।

ব্যায়াম করার পর কলা খেলে কি হয়?

পটাশিয়ামের চাহিদা পূরণ করে পেশীর স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।

উপসংহার

আশাকরি এখন ব্যায়াম করার সঠিক সময় নির্ধারণ করতে আর অসুবিধা হবে না। এরকম আরো ব্যায়াম রিলেটেড আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথে থাকুন ও হোমপেজ GetFitBD ভিসিট করুন।

শেয়ার করুন:

You May Also Like

Leave a Comment