ব্যায়াম কি? কত প্রকার ও কি কি?

ব্যায়াম কী বা কাকে বলে?

শারীরিক ব্যায়াম হল বিশেষ ধরণের শারীরিক কার্যক্রম যা শারীরিক ও মানুষিক সুস্থতা রক্ষা করার পাশাপাশি মানুষের শক্তি ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করে। ব্যায়ামের মাধ্যমে মানসিক চাপও কমানো সম্ভব। ভালো খাদ্যবাস এবং সক্রিয় জীবনযাপন ফিটনেসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মাংসপেশী বৃদ্ধি, সংবহন তন্ত্র সবল রাখা, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, ওজন হ্রাস, শরীরকে অকীর্ষনীও করা, যৌন আবেদন বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, মানুসিক সুস্থতা বজায় রাখা থেকে শুরু করে আরো বিভিন্ন কারণে শারীরিক ব্যায়াম করা হয়।

নিয়মিত ব্যায়ামের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। এগুলোর পাশাপাশি, হৃদ্ররোগ, সংবহন তন্ত্রের জটিলতা, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং স্থূলতা রোধে শরীরচর্চা বা শারীরিক ব্যায়াম কার্যকর ভূমিকা রাখে অন্যদিকে ভুল নিয়মে ব্যায়াম করলে ব্যায়ামের অপকারিতাগুলোর সম্মুখীন হওয়ার সম্বাবনা বেশি থাকে।

নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে ফিটনেস ঠিক থাকে। ফিটনেস একটি খুব ব্যক্তিগত শব্দ! ফিটনেস হল একটি সুস্থ মন, শরীর এবং আত্মা যা আপনাকে আপনার সম্ভাবনাকে সর্বাধিক করতে সাহায্য করে। আপনার ফিটনেসের সংজ্ঞা আপনার আগ্রহ, শারীরিক ক্ষমতা এবং লক্ষ্য দ্বারা প্রভাবিত হবে।

শারীরিক সুস্থতা রক্ষার্থে ব্যায়ামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত, এজন্য অনেকে ব্যায়ামকে “অলৌকিক” এবং “আশ্চর্যজনক” ঔষধ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

ব্যায়াম কত প্রকার ও কি কি?

ব্যায়াম কি এবং কত প্রকার ও কি কি

চলুন জেনে নেই ব্যায়াম কত প্রকার ও কি কি? ব্যায়াম মূলত ৩ প্রকার যেমনঃ 

  1. অ্যারোবিক ব্যায়াম বা সবাত ব্যায়াম বা কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম
  2. অ্যানেরোবিক ব্যায়াম বা অবাত ব্যায়াম বা পেশী শক্তিশালীকরণ ব্যায়াম
  3. ফ্লেক্সিবিলিটি/স্ট্রেচিং ব্যায়াম বা নমনীয়তার ব্যায়াম বা পেশীটান ব্যায়াম

সহজে ইংরেজিতে বলতে গেলে ১) Cardio, ২) Muscle Strengthening, ৩) Flexibility

১. অ্যারোবিক ব্যায়াম বা সবাত ব্যায়াম

যেসব শারীরিক ব্যায়াম দীর্ঘ সময় ধরে করা হয় এবং শক্তি উৎপাদনে অক্সিজেনের ব্যবহার হয়, অর্থাৎ বাড়তি শ্বাস নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে, সেগুলোকে অ্যারোবিক ব্যায়াম বলে। এটিকে কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম বা Cardio Exercise ও বলা হয়।

Cardio Exercise আপনার হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি করে রক্তনালীগুলির মাধ্যমে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পাম্প করার জন্য আপনার শরীরের ক্ষমতা বাড়ায়। 

এসব ব্যায়াম হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসসহ সামগ্রিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সহনশীলতা বৃদ্ধি করে শরীরকে active রাখে। উদাহরণ হল সাইক্লিং, সাতার, হাইকিং, দড়ি লাফ, সিঁড়ি আরোহণ, পর্বত আরোহন, Burpees, Elliptical, টেনিস, ফুটবল ইত্যাদি।

২. অ্যানেরোবিক ব্যায়াম বা অবাত ব্যায়াম

যেসমস্ত ব্যায়াম তার প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদনে অক্সিজেন ব্যবহার করে না, অর্থাৎ বাড়তি শ্বাস নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না, সেসব ব্যায়ামকে এনারোবিক ব্যায়াম বলে। এ ব্যায়াম muscle strengthening exercises নামে অনেক জনপ্রিয়। 

strengthening exercises শক্তি বৃদ্ধি, ভারসাম্য বৃদ্ধি, মাংসপেশী গঠন ও হাড়ের সবলতা বৃদ্ধি করে। অ্যানেরোবিক ব্যায়ামের উদাহরণ হল পুশআপ, বাইসেপ কার্লস, পুলআপ, squats, Plank, ভারোত্তলন ইত্যাদি।

৩. ফ্লেক্সিবিলিটি ব্যায়াম

এসব ব্যায়াম শরীরের মাংশপেশীর প্রসারণের মাধ্যমে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালনের ব্যাপকতা বৃদ্ধি করে ফলে ইনজুরি বা আঘাতের প্রবণতা হ্রাস পায়। এটি নমনীয়তা ব্যায়াম বা পেশী টান ব্যায়াম নামেও পরিচিত। আপনি নিয়মিত স্ট্রেচিং এবং yoga exercise এর মাধ্যমে Flexibility বাড়াতে পারেন।

ফিটনেসের ৫ টি উপাদান

  1. শরীরের গঠন
  2. কার্ডিওভাসকুলার বা কার্ডিওরেসপিরেটরি সহনশীলতা
  3. নমনীয়তা
  4. পেশীবহুল সহিষ্ণুতা
  5. পেশী শক্তি

এ বিষয়ে বিস্তারিত পড়ুন

ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তা

অনিয়মের ফলে মানুষের শরীরে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়। বেশিরবাগ সময় বিভিন্ন চিকিৎসা গ্রহণ করা সত্ত্বেও এসব রোগ নির্মূল হয় না। 

কিন্তু নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করার মাধ্যমে এসব সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। হৃদরোগ, সংবহনতন্ত্রের জটিলতা, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, স্থুলতা ইত্যাদি কমাতে এক্সারসাইজ কার্যকর ভূমিকা রাখে।

আপনি যদি স্টুডেন্ট হন পরবর্তী কোনো পোস্টে আমরা স্টুডেন্টদের জন্য ব্যায়াম এবং পড়াশুনায় মনোযোগ বাড়ানোর ব্যায়াম সম্পর্কে আলোচনা করবো।

এখানে ক্লিক করুন 👉 কাজের সময় কীভাবে ব্যায়াম করবেন (১৩টি টিপস)

ব্যায়ামের উপকারিতা

ব্যায়ামের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। এর মধ্যে কয়েকটি হলো:

  1. ব্যায়াম আপনাকে সুখী বোধ করতে পারে
  2. ব্যায়াম ওজন কমাতে সাহায্য করে
  3. ব্যায়াম আপনার পেশী এবং হাড়ের জন্য ভাল
  4. ব্যায়াম আপনার শক্তির মাত্রা বাড়াতে পারে
  5. ব্যায়াম আপনার দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে, যেমন: হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং অস্টিওপরোসিস।
  6. ব্যায়াম ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারে
  7. ব্যায়াম আপনার মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এবং স্মৃতিশক্তির উন্নয়ন করতে পারে। 
  8. ব্যায়াম করলে শরীর হালকা এবং ঘুম এর মান ভালো হয়
  9. ব্যায়াম ব্যথা কমাতে পারে
  10. ব্যায়াম যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন 👉 ব্যায়ামের উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তা (২০ টি )

কীভাবে আঘাত এড়িয়ে নিরাপদে ওয়ার্কআউট করবেন?

আপনার যদি পূর্বের কিছু শারীরিক সমস্যা থাকে, তাহলে ব্যায়াম প্রোগ্রাম শুরু করার আগে চিকিত্সকের সাথে পরামর্শ করুন। একটি ব্যায়াম প্রোগ্রামের নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য সঠিক ব্যায়াম কৌশল অপরিহার্য।

তবুও, সর্বোত্তম ফলাফলের জন্য আপনার ব্যক্তিগত প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিটি অনুশীলন কিচুটা পরিবর্তন করতে হতে পারে। সর্বদা এমন একটি ওজন নির্বাচন করুন যাতে করে ব্যায়ামের সময় শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। ব্যায়ামের সময় শরীরের প্রতি গভীর মনোযোগ দিন এবং যদি ব্যথা বা অস্বস্তি লক্ষ্য করেন তবে অবিলম্বে বন্ধ করুন।

ক্রমাগত অগ্রগতি দেখতে এবং শরীরের শক্তি তৈরি করতে, ব্যায়াম প্রোগ্রামে সঠিক ওয়ার্ম-আপ, কুল ডাউন, বিশ্রাম এবং পুষ্টি অন্তর্ভুক্ত করুন। পেশী দ্রুত পুনরুদ্ধারের জন্য একই পেশী গোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার আগে চব্বিশ থেকে আটচল্লিশ ঘন্টা বিশ্রাম নিন।

এখানে ক্লিক করুন 👉 ব্যায়ামের কিছু অপকারিতা এবং সেগুলো উপেক্ষা করার উপায়

ব্যায়াম করার পদ্ধতি

  • সব ধরণের ব্যায়াম সবার জন্য না। আপনার বয়স ও শারীরিক ক্ষমতা অনুযায়ী ধরন নির্বাচন করুন
  • শুরুতেই শরীরের কয়েক কপি ছবি, আপনার ওজন, BMI ইত্যাদি লিখে রাখুন। এ তথ্যের সাহায্যে প্রতিমাসের উন্নতি খেয়াল করুন। 
  • ভরপেটে কখনোই ব্যায়াম করবেন না। খাওয়ার পর অন্তত ২ ঘন্টা অপেক্ষ করুন।
  • খুব টাইট পোশাক এর পরিবর্তে হালকা ঢিলেঢালা আরামদায়ক পোশাক পরে ব্যায়াম করুন।
  • ব্যায়ামের আগে অবশ্যই ওর্য়াম আপ করবেন। 
  • ব্যায়ামের সময় স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নিন। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হলে বা যে কোনো ধরণের শারীরিক কষ্ট বা অসস্তি হলে তৎক্ষনাৎ ব্যায়াম বন্ধ করুন।
  • প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যায়াম করুন
  • প্রয়োজনে চিকিৎসক এবং প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিন
  • গর্ভবতীরা মানসিক চাপমুক্ত থাকতে ও শরীর সুস্থ রাখতে নিযমিত কিছু ব্যায়াম করতে পারেন।

ব্যায়াম সম্পর্কে কিছু তথ্য

  • ভাল শারীরিক সুস্থতা অনেক শারীরিক ও মানুসিক সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। 
  • ব্যায়ামের মাধ্যমে, ওজন পরিবর্তন না করেও শরীরের গঠন পরিবর্তন হতে পারে।
  • ফাইবার হাইপারট্রফি এবং স্নায়ু পরিবর্তনের কারণে পেশী শক্তি বৃদ্ধি পায়।
  • নমনীয়তা বাড়ানোর জন্য স্ট্রেচিং অনেকগুলি মেডিকেল সমস্যা কমাতে পারে।

ব্যায়াম সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা

ব্যায়াম করার উপযুক্ত সময় কোনটি?

সকালে ঘুম থেকে উঠার পর এবং বিকেলে ব্যায়াম করার জন্য উপযুক্ত সময়। দুপুরবেলা বা বেশি গরমে ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকা ভালো কারণ এ সময় আপনি সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন।

সারাদিন ব্যস্ততার জন্য সময় না পেলে রাতে ব্যায়াম করেন। এতে কোনো সমস্যা নেই। তবে রাতে গুমাতে যাওয়ার আগে ভারী ব্যায়াম না করার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে।

এখানে ক্লিক করুন 👉 সকালের ব্যায়ামের ১৬টি উপকারিতা

সপ্তাহে কতদিন ব্যায়াম করা উচিত?

৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ৫ দিন বা ৪০ মিনিট করে সপ্তাহে ৪ দিন  ব্যায়ামই শরীর সুস্থ রাখার জন্য যথেষ্ট।

ব্যায়াম করার পর কি খাওয়া উচিত?

ব্যায়ামের পর শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়। আধা ঘণ্টা পর হালকা খাবার যেমন ফল কিংবা ফলের রস এবং কমপক্ষে ২ ঘণ্টা পর ভারী খাবার।

বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন 👉 ব্যায়াম করার পর কি খাওয়া উচিত (ছবি সহ তালিকা)

খাওয়ার কতক্ষণ পর ব্যায়াম করা উচিত?

পারসোনা হেলথের প্রধান প্রশিক্ষক ফারজানা খানমের মতে, ভারী খাবারের অন্তত ২ ঘন্টা পর এবং হালকা খাবার যেমন ফল খাওয়ার আধা ঘন্টা থেকে ১ ঘন্টা পর ব্যায়াম করা ভালো।

বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন 👉 খাওয়ার কতক্ষণ পর ব্যায়াম করা উচিত?

উপসংহার

সাধারণভাবে, ফিটনেস মানে বিভিন্ন মানুষের কাছে ভিন্ন জিনিস। গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটি হল, যেকোনো নিয়মিত ব্যায়াম একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আপনি যত বেশি ব্যায়াম করবেন, তত বেশি স্বাস্থ্যকর দেখতে এবং অনুভব করবেন।

শেয়ার করুন:

You May Also Like

1 thought on “ব্যায়াম কি? কত প্রকার ও কি কি?”

Comments are closed.